সূচনা : গতিতেই জীবন । জীবনের এ গতি অবিরাম নয় , সবিরাম । আর এ জন্যই জীবন চলার পথ কতকগুলাে পর্বে পর্বে বিভক্ত । আমার জীবনের একটা বড় চমক আমার কলেজ জীবন । এ জীবনের প্রথম দিনটি এখনও আমার হৃদয়মন্দিরে চিরসতেজী ফুলের মতাে সুবাস ছড়াচ্ছে । কেমন যেন একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় মনটা আমার জমে যায় , যখন স্মৃতিতে জাগরিত হয় ওই সুন্দর দিনটির কথা ।
কলেজ পূর্ব সােনালি দিনগুলাে : পড়তাম গ্রামের স্কুলে । নাগরিক ভাষায় অনেকে এগুলােকে মফস্বল স্কুল বলেন । আদর পেয়েছিলাম পল্লীর স্নিগ্ধ ক্রোড়ের । তমালের ঘন ছায়ায় ঘুরে ঘুরে মহুয়ার পাগল করা সুবাস নিয়ে জীবনের পনেরটি বছর কাটিয়েছিলাম বড় আনন্দে । দেখেছি দিঘির কালাে জলে শুভ্র রাজহংসের সাঁতার , কৃষ্ণচূড়ার আগুন ধরানাে রঙ , শিশির সিক্ত শেফালীর বন্যা , নদী তীরের সন্ধ্যারাগিনী । পাখির ছানা খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে যেতাম বনে । বুনাে ফুলের পাপড়ি ঝরে উদোম গা ভরে যেত । মনের অজান্তে খেই হারাতাম মেঠো পথে চলতে গিয়ে । গাছে চড়তাম , বাঁশি বাজাতাম । স্কুল থেকে ফেরার পথে সে কি দুষ্টুমি ! এস , এস , সি পরীক্ষায় পাস করে পল্লী প্রকৃতির সেই উজ্জ্বল দামাল হলাম কলেজের ছাত্র । মাটির সোঁদা গন্ধ বিলীন হলাে ইটের পােড়া পাজরে । সাইকাস আর নারকেল গাছের শহর ওটা । নাম বরিশাল । বাংলার ভেনিস এ বরিশালের সর্বশ্রেষ্ঠ কলেজ ‘ ব্রজমােহন মহাবিদ্যালয় '। সংক্ষেপে বি . এম . কলেজ । গৌরব করে এটাকে বলা হয় ' অক্সফোর্ড অফ বেঙ্গল ' ।
কলেজে প্রথম দিন : আটটায় বাসা থেকে বেরুলাম । কলেজ রােড ধরে কলেজের প্রথম গেটে পৌছুলাম । ভেতরকার ছােট ছােট রাস্তাগুলাে ছাত্র - ছাত্রীদের ভিড়ে গিজ গিজ করছে । একটু হাঁটছি আবার প্যান্ট শার্ট দেখছি । আমাকে কি গেঁয়াে গেয়ে মনে হচ্ছে ? না একটুও না , নিজেকে প্রবােধ দিয়ে খুব মুডে পা ফেলছি ' । বারে ! হোঁচট খাচ্ছি কেন ? দোষটা কি আমার , না , অন্যরা আমাকে হােচট খাওয়াচ্ছে । কলেজ চত্বরে ঢােকার আগে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম । এখানে নিজেকে খাপ খাওয়ানাের মতাে পােশাক ও মানসিকতা আমার কতটুকু ।
কলেজ ভবন : বেশ সুপরিসর জায়গা । প্রথম দর্শনেই পাঁচটা আলিসান ভবন চোখে পড়ল । দুটো প্রাচীন , তিনটে আধুনিক । পুরনাে দুটো শতাব্দীর স্বাক্ষর । প্রতিটি ভবনের সামনেই একটা মাঠ , আর একটা দীঘিসম পুকুর । মাঠের বড় ঘাস , পুকুর জলের সুবােধ ঢেউগুলাে দেশের বাড়ির কথা মনে করিয়ে দিল । দেখার সময় নেই । এখনই ক্লাস শুরু হবে ।
স্মৃতিময় সেই দিন : শত চেষ্টা করেও রুম খুঁজে পেলাম না । অবশেষে খুব সাহস করে একজন পুরনাে ছাত্রের সাহায্য নিলাম । খুঁজে পেলাম রুম । আরে ! স্যার যে এসে গেছেন । এখন উপায় । সারা কক্ষে নীরবে বসে আছে শতাধিক ছাত্র । প্লাটফর্মে দাড়ানাে স্যারের ইংরেজি বক্তৃতা স্পষ্টতই দরজায় দাড়িয়ে শুনতে পেলাম । আসব কি স্যার ? কতটুকু বলার আর সাহস পেলাম না ? ক্লাস শেষ হলাে । স্যার বেরুতে না বেরুতেই দৌড়াদৌড়ির হিড়িক পড়ে গেল । এবার আর বসে থাকতে পারলাম না । যােগ দিলাম সকলের সাথে । সােজা বিপরীত দিকের রুমটায় ছিল দ্বিতীয় পিরিয়ডের ক্লাস । এটা বাংলার ক্লাস । একজন ম্যাডাম পড়াবেন । পুরাে ক্লাসে তার কণ্ঠ শােনা যাচ্ছিল না । কেউ কেউ কথা বলছিল পেছনে । ম্যাডাম অনেক বক্তব্য রাখলেন । দুই - তৃতীয়াংশ চুপচাপ হয়ে গেল । এখনও কথা বলছে - ওরা কারা ? একজন বললো - চুপ , ওরা আলেকান্দার । পুরাে পাঁচ ঘণ্টার শারীরিক কসরতের পর সাড়ে বারটায় ছুটি পেলাম । প্রথম দিনটা রুটিন ঠিক করতে আর রুম চিনতেই ব্যয় হয়ে গেল
উপসংহার : আজ আমি পরীক্ষার্থী । অনেক ঘটনাই গত ১৬ মাসে ঘটে গেছে কলেজে । কিন্তু প্রথম দিনের ওই অম্ল মধুর স্মৃতি কিছুতেই মলিন হলাে না । এর ছাপ দিন দিন স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে । আজ পরীক্ষার হলে কলেজে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা লিখতে বার বারই মনে হচ্ছে - ভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে বেশ কষ্টই হয় । এহেন প্রচেষ্টা জীবনের পক্ষে একটি মূল্যবান অভিজ্ঞতার সংযােজন ।
কলেজ পূর্ব সােনালি দিনগুলাে : পড়তাম গ্রামের স্কুলে । নাগরিক ভাষায় অনেকে এগুলােকে মফস্বল স্কুল বলেন । আদর পেয়েছিলাম পল্লীর স্নিগ্ধ ক্রোড়ের । তমালের ঘন ছায়ায় ঘুরে ঘুরে মহুয়ার পাগল করা সুবাস নিয়ে জীবনের পনেরটি বছর কাটিয়েছিলাম বড় আনন্দে । দেখেছি দিঘির কালাে জলে শুভ্র রাজহংসের সাঁতার , কৃষ্ণচূড়ার আগুন ধরানাে রঙ , শিশির সিক্ত শেফালীর বন্যা , নদী তীরের সন্ধ্যারাগিনী । পাখির ছানা খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে যেতাম বনে । বুনাে ফুলের পাপড়ি ঝরে উদোম গা ভরে যেত । মনের অজান্তে খেই হারাতাম মেঠো পথে চলতে গিয়ে । গাছে চড়তাম , বাঁশি বাজাতাম । স্কুল থেকে ফেরার পথে সে কি দুষ্টুমি ! এস , এস , সি পরীক্ষায় পাস করে পল্লী প্রকৃতির সেই উজ্জ্বল দামাল হলাম কলেজের ছাত্র । মাটির সোঁদা গন্ধ বিলীন হলাে ইটের পােড়া পাজরে । সাইকাস আর নারকেল গাছের শহর ওটা । নাম বরিশাল । বাংলার ভেনিস এ বরিশালের সর্বশ্রেষ্ঠ কলেজ ‘ ব্রজমােহন মহাবিদ্যালয় '। সংক্ষেপে বি . এম . কলেজ । গৌরব করে এটাকে বলা হয় ' অক্সফোর্ড অফ বেঙ্গল ' ।
কলেজে প্রথম দিন : আটটায় বাসা থেকে বেরুলাম । কলেজ রােড ধরে কলেজের প্রথম গেটে পৌছুলাম । ভেতরকার ছােট ছােট রাস্তাগুলাে ছাত্র - ছাত্রীদের ভিড়ে গিজ গিজ করছে । একটু হাঁটছি আবার প্যান্ট শার্ট দেখছি । আমাকে কি গেঁয়াে গেয়ে মনে হচ্ছে ? না একটুও না , নিজেকে প্রবােধ দিয়ে খুব মুডে পা ফেলছি ' । বারে ! হোঁচট খাচ্ছি কেন ? দোষটা কি আমার , না , অন্যরা আমাকে হােচট খাওয়াচ্ছে । কলেজ চত্বরে ঢােকার আগে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম । এখানে নিজেকে খাপ খাওয়ানাের মতাে পােশাক ও মানসিকতা আমার কতটুকু ।
কলেজ ভবন : বেশ সুপরিসর জায়গা । প্রথম দর্শনেই পাঁচটা আলিসান ভবন চোখে পড়ল । দুটো প্রাচীন , তিনটে আধুনিক । পুরনাে দুটো শতাব্দীর স্বাক্ষর । প্রতিটি ভবনের সামনেই একটা মাঠ , আর একটা দীঘিসম পুকুর । মাঠের বড় ঘাস , পুকুর জলের সুবােধ ঢেউগুলাে দেশের বাড়ির কথা মনে করিয়ে দিল । দেখার সময় নেই । এখনই ক্লাস শুরু হবে ।
স্মৃতিময় সেই দিন : শত চেষ্টা করেও রুম খুঁজে পেলাম না । অবশেষে খুব সাহস করে একজন পুরনাে ছাত্রের সাহায্য নিলাম । খুঁজে পেলাম রুম । আরে ! স্যার যে এসে গেছেন । এখন উপায় । সারা কক্ষে নীরবে বসে আছে শতাধিক ছাত্র । প্লাটফর্মে দাড়ানাে স্যারের ইংরেজি বক্তৃতা স্পষ্টতই দরজায় দাড়িয়ে শুনতে পেলাম । আসব কি স্যার ? কতটুকু বলার আর সাহস পেলাম না ? ক্লাস শেষ হলাে । স্যার বেরুতে না বেরুতেই দৌড়াদৌড়ির হিড়িক পড়ে গেল । এবার আর বসে থাকতে পারলাম না । যােগ দিলাম সকলের সাথে । সােজা বিপরীত দিকের রুমটায় ছিল দ্বিতীয় পিরিয়ডের ক্লাস । এটা বাংলার ক্লাস । একজন ম্যাডাম পড়াবেন । পুরাে ক্লাসে তার কণ্ঠ শােনা যাচ্ছিল না । কেউ কেউ কথা বলছিল পেছনে । ম্যাডাম অনেক বক্তব্য রাখলেন । দুই - তৃতীয়াংশ চুপচাপ হয়ে গেল । এখনও কথা বলছে - ওরা কারা ? একজন বললো - চুপ , ওরা আলেকান্দার । পুরাে পাঁচ ঘণ্টার শারীরিক কসরতের পর সাড়ে বারটায় ছুটি পেলাম । প্রথম দিনটা রুটিন ঠিক করতে আর রুম চিনতেই ব্যয় হয়ে গেল
উপসংহার : আজ আমি পরীক্ষার্থী । অনেক ঘটনাই গত ১৬ মাসে ঘটে গেছে কলেজে । কিন্তু প্রথম দিনের ওই অম্ল মধুর স্মৃতি কিছুতেই মলিন হলাে না । এর ছাপ দিন দিন স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে । আজ পরীক্ষার হলে কলেজে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা লিখতে বার বারই মনে হচ্ছে - ভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে বেশ কষ্টই হয় । এহেন প্রচেষ্টা জীবনের পক্ষে একটি মূল্যবান অভিজ্ঞতার সংযােজন ।



0 Comments