ভূমিকা : প্রাণী ও পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর । পরিবেশই প্রাণের ধারক , জীবনীশক্তির যােগানদার । আমরা যেখানে থাকি , জীবিকার জন্য আমাদের যে অঞ্চল ঘােরাফেরা করতে হয় , এর । আশপাশে যে অঞ্চলগুলাে থাকে তাকেই পরিবেশ বলে । বিজ্ঞানের বিকাশের ফলে এই পরিবেশ নিয়ত পরিববর্তিত হচ্ছে । পরিবেশ প্রতিকূল হলে তার ধ্বংস ও সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী । বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জলযাত্রা , সভ্যতার ক্রমবিকাশ ও মানবকল্যাণের পাশাপাশি নানাভাবে আমাদের পরিবেশকে বিষময় ও দূষিত করে তুলেছে । সুতরাং , বলতে গেলে বিশ্বের প্রায় সামগ্রিক পরিবেশ আজ ধ্বংসের সম্মুখীন ।

পরিবেশ দূষিত হওয়ার কারণ : প্রায় ছয়শ কোটি মানুষের আবাসভূমি এ পৃথিবীতে নানা কারণে পরিবেশ দূষণ ঘটছে । জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাকৃতিক সম্পদ , জল , মাটি ও বায়ুর উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ছে , এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে । বন পারিবশে রক্ষার উপকরণ । কিন্তু বর্তমানে অবাধে বন ধ্বংসের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে । বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য কলকারখানা , মিল ফ্যাক্টরী । রাস্তায় চলছে কোটি কোটি যানবাহন । এ সবের ধোয়া পরিবেশকে দূষিত করছে । গ্রামঞ্চলে পুকুর - নর্দমায় কচুরিপানা পচে , মানুষও রাস্তার পাশে আবর্জনা ফেলে নানাভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে । তাছাড়া গরু , মহিষ , কুকুর , ছাগল প্রভৃতি মারা গেলে সেগুলাে পচেও পরিবেশ দূষিত হয় । গ্রামাঞ্চলের অস্বাস্থ্যকর পায়খানা এবং পানি পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে ।

পরিবেশ দূষণের প্রকারভেদ : পরিবেশ দূষণ মূলত দুভাবে হয়ে থাকে । যথা : স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক উপায়ে এবং কৃত্রিম উপায়ে । সাধারণত প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলে পরিবেশে যে অবনতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে তা প্রাকৃতিক দূষণ । প্রাকৃতিক দূষণের মধ্যে রয়েছে সীসা , পারদ , সালফার ডাইঅক্সাইড , কার্বন ডাইঅক্সাইড , কার্বন মনােক্সাইড ইত্যাদি । তাছাড়া আমাদের মলমূত্র এবং বিভিন্ন প্রকার পচন থেকেও প্রাকৃতিক দূষণ হয়ে থাকে । কৃত্রিম দূষণের নিয়ামক হচ্ছে নানা কীটনাশক ওষুধ , গুড়াে সাবান , ওষুধপত্র ও প্রসাধন সামগ্রী , এমনকি প্লাস্টিকও । এগুলাে বহুদিন ধরে পরিবেশে টিকে থাকে । রােদ , জল , বৃষ্টি , বাতাস এগুলােকে কিছুই করতে পারে না । তাই এগুলাে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে ।

পানিদূষণ : পানিদূষণ অগ্রসরমান , সভ্যতার আর এক অভিশাপ । পেট্রোলিয়াম গ্যাস , কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা , কার্বন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি পানিদূষিত করার সহায়ক । উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশেই গৃহকার্যের পরিত্যক্ত পদার্থ সাগরে নিক্ষেপ করতে দেখা যায় । ফলে পানি দূষিত হচ্ছে । চটকল , কাপড় কল , চিনিকল , তৈল উৎপাদন কারখানা , চামড়া পাকা করার কারখানা , অস্ত্র তৈরির কারখানা ইত্যাদির বর্জ্য পদার্থ প্রতিনিয়ত নদীর পানিদূষিত করছে । তাছাড়া শহরের নালার পানি নদীতে পড়েও নদীর জল দূষিত করছে । ফলে খালবিল , নদী সমুদ্রের মাঝেও দূষণ ঘটছে । এসব মাছ ও দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে মানুষ নানা রােগের শিকার হচ্ছে ।

বায়ুদূষণ : বায়ু আমাদের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ । নানাভাবে এ বায়ু দূষিত হচ্ছে । ভারি ধাতু , তেল , কয়লা ইত্যাদি জ্বালিয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড সৃষ্টি বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ । কলকারখানা ও যানবাহনের কালােধোয়া বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করছে । ফলে নানা জটিল ও কঠিন রােগের সৃষ্টি হচ্ছে । মাথাধরা , স্বাসকষ্ট , হাঁপানি , ফুসফুস ক্যান্সার প্রভৃতি বায়ুদূষণের ফল । বায়ুদূষণ কৃষিকাজের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর ।

দূষণের প্রতিকার : পরিবেশ দূষণের পরিণাম খুবই ভয়াবহ । মানুষ পরিবেশ দূষণ রােধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দকে ' ইন্টারন্যাশনাল ড্রিংকিং ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন ’ দশক হিসেবে পালন করা হয় । তাছাড়া পরিবেশ দূষণ রােদে বৃক্ষরােপণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া গেছে । বায়ুদূষণের প্রতিকারের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে কলকারখানা দহন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে নির্গত দূষকের পরিমাণ কমানাের ব্যবস্থা । ময়লাআবর্জনা মাটিতে পুতে রেখে বা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলেও পরিবেশ দূষণ রােধ করা যায় । পরিবেশ দূষণ রােধে জনগণের সচেতনতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । জনগণ পরিবেশ দূষণ ও রােধ সম্পর্কে জ্ঞাত ও সজাগ থাকলে পরিবেশ দূষণ বহুলাংশে হ্রাস পাবে ।

উপসংহার : পরিবেশ দূষণ নিয়ে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রই কম - বেশি চিন্তিত । বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরিবেশ রক্ষার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে । একদিকে মানব ভ্যতার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটানাে , অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ রােধ নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ । তবুও সুখী , সমৃদ্ধিশালী মনব সভ্যতার গঠনের জন্য পরিবেশ দূষণ রােধ অত্যাবশ্যক ।